নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তেকালের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগপূর্ণ একটি অধ্যায়। তার মৃত্যুর কারণ, শেষ দিনগুলোর ঘটনা এবং তার বিদায়ের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
১. শেষ অসুস্থতা ও শারীরিক অবস্থা
৬৩২ খ্রিস্টাব্দ (১১ হিজরি) রবিউল আউয়াল মাসে নবীজি (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তার অসুস্থতা প্রায় দুই সপ্তাহ স্থায়ী ছিল।
প্রথমদিকে তিনি তার স্ত্রী মায়মুনা (রা.)-এর ঘরে ছিলেন, পরে অন্যান্য স্ত্রীদের অনুমতি নিয়ে আয়েশা (রা.)-এর ঘরে থাকেন।
অসুস্থতার সময় তিনি প্রচণ্ড জ্বর ও মাথাব্যথায় ভুগছিলেন।
তিনি বারবার বলতেন: “আমি খায়বারের বিষের যন্ত্রণা অনুভব করছি।”
২. বিষপ্রয়োগের ঘটনা ও এর প্রভাব
খায়বার যুদ্ধের (৭ হিজরি) পর এক ইহুদি নারী, যার নাম ছিল জয়নব বিনতে হারিস, নবীজি (সা.)-কে ভেড়ার মাংসে বিষ মিশিয়ে খাওয়ান।
নবীজি (সা.) প্রথম কিয়ামত (মাংসের টুকরা) মুখে নিলে সাথে সাথেই বুঝতে পারেন যে এতে বিষ রয়েছে এবং থেমে যান।
তার এক সাহাবি বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন, তবে নবীজি (সা.) সাথে সাথে মারা যাননি।
যদিও বিষ তার শরীরে সম্পূর্ণ কাজ করেনি, তবে মনে করা হয় এটি দীর্ঘমেয়াদে তার স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।
তার ইন্তেকালের সময় তিনি বলেছিলেন: “আমি এখনো খায়বারের বিষের যন্ত্রণা অনুভব করছি, মনে হয় এটি আমার জীবন শেষ করে দিচ্ছে।”
৩. ইন্তেকালের দিন ও শেষ কথাগুলো
রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ, সোমবার ফজরের সময় তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করেন এবং মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
সাহাবিরা আবু বকর (রা.)-এর ইমামতিতে নামাজ পড়ছিলেন, নবীজি (সা.) পর্দা সরিয়ে দেখে হাসলেন এবং সাহাবিদের নামাজে নিমগ্ন দেখে খুশি হন।
এরপর তিনি আয়েশা (রা.)-এর কোলে মাথা রাখেন এবং কিছু সময় পর বলেন:
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহুম্মা রফিকুল আ’লা (হে আল্লাহ, আমাকে সর্বোচ্চ সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন)”
এই কথা বলার পর তিনি ইন্তেকাল করেন।
৪. মৃত্যুর পর ঘটনা ও দাফন
নবীজি (সা.)-এর মৃত্যুতে মদিনায় গভীর শোক নেমে আসে।
উমর (রা.) প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি এবং বলেছিলেন, “যে বলবে নবীজি মারা গেছেন, আমি তাকে হত্যা করব!”
পরে আবু বকর (রা.) সাহসীভাবে বলেন:
“যে মুহাম্মদ (সা.)-কে উপাস্য বলে মানত, সে জেনে রাখুক তিনি মারা গেছেন। কিন্তু যে আল্লাহকে উপাস্য বলে মানে, সে জেনে রাখুক আল্লাহ চিরঞ্জীব।”
এবং তিনি সুরা আলে ইমরানের আয়াত (৩:১৪৪) তেলাওয়াত করেন:
“মুহাম্মদ তো কেবল একজন রাসুল, তার আগেও অনেক রাসুল চলে গেছেন। তবে কি সে মারা গেলে বা নিহত হলে তোমরা ফিরে যাবে?”
এই কথা শুনে সাহাবিরা ধাতস্থ হন।
নবীজি (সা.)-এর গোসল, কাফন ও দাফন সম্পন্ন করা হয়।
তাকে মসজিদে নববীর ভেতরে আয়েশা (রা.)-এর কক্ষেই দাফন করা হয়।
৫. নবীজি (সা.)-এর বিদায়ের প্রভাব
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শোক ও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
আবু বকর (রা.) প্রথম খলিফা মনোনীত হন।
ইসলামের প্রচার ও সংহতি বজায় রাখতে সাহাবিরা সক্রিয় হন।
উপসংহার
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। যদিও তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা যান, তবুও বিষের প্রভাব তার শরীরে রয়ে গিয়েছিল বলে অনেক হাদিসে পাওয়া যায়। তার ইন্তেকালের পর সাহাবিরা ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে দেন, যা আজও পৃথিবীতে টিকে আছে।
সাধারণ কীওয়ার্ড:
নবী মুহাম্মদ ইন্তেকাল
রাসুলুল্লাহর মৃত্যু
মুহাম্মদ (সা.) শেষ দিন
নবীর মৃত্যু কারণ
ইসলামে নবীর মৃত্যু
নবীজির শেষ কথা
বিষক্রিয়া সম্পর্কিত কীওয়ার্ড:
নবী মুহাম্মদ বিষক্রিয়া
খায়বারের বিষ
ইহুদি নারীর বিষ প্রয়োগ
নবীজির বিষ খাওয়ার ঘটনা
নবীজির শরীরে বিষের প্রভাব
খায়বার যুদ্ধ বিষ প্রয়োগ
হাদিস ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ:
নবী মুহাম্মদ মৃত্যু হাদিস
নবীর মৃত্যু সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস
মুহাম্মদ (সা.) বিষ খাওয়ার হাদিস
নবীজির মৃত্যু সম্পর্কে ইসলামী ইতিহাস
সাহাবিদের প্রতিক্রিয়া:
উমর (রা.) নবীর মৃত্যু প্রতিক্রিয়া
আবু বকর (রা.) নবীজির মৃত্যু ঘোষণা
সাহাবিদের শোক ও প্রতিক্রিয়া
দাফন ও শেষকৃত্য:
নবী মুহাম্মদ দাফন
মসজিদে নববীতে দাফন
নবীজির জানাজা